বাগেরহাটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৯ দিন পর অর্ধকোটি টাকার যন্ত্রটি ডেমরা থেকে উদ্ধার। বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কেমিক্যাল হাউসের ল্যাব থেকে চুরি যাওয়ার ১৯ দিন পর প্রায় অর্ধকোটি টাকার যন্ত্রটি ঢাকার ডেমরা থেকে উদ্ধার হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের মাধ্যমেই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে কয়লার দাহ্য ক্ষমতা পরীক্ষার যন্ত্রটি চুরি হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মরত তিন কর্মী ও সাবেক এক কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্যই জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরাপদ এলাকা থেকে ‘বোম্ব ক্যালরিমিটার’ নামের যন্ত্রটি চুরি করে বাইরে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। তা ছাড়া যন্ত্রটি একদম ছোট না। যন্ত্রটি একটি বড় আকারের প্রিন্টারের সমান। মামলাটির তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই চুরির সঙ্গে গ্রেপ্তার চারজন ছাড়াও আরও অনেকে জড়িত বলে মনে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রের মধ্যে দুটি পক্ষ বিদ্যমান বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গাড়িতে করে যন্ত্রটি কেন্দ্র থেকে বের করা হয়। কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে কোনো গাড়ি বের হতে পারার কথা না। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। ঘটনার সময় কেন্দ্রের ওই এলাকায় একাধিক ব্যক্তি দায়িত্বে থাকলেও মামলায় আসামি করা হয়নি কাউকেই।
‘বোম্ব ক্যালরিমিটার’ চুরির ঘটনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় কোনো আসামির নাম ছিল না। রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুদ্দীন বলেন, তদন্তে নেমে বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করে পুলিশ। এই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে রাব্বি নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার ডেমরা থানার কোনাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক একটার দিকে উদ্ধার হয় যন্ত্রটি।
আরও পড়ুনঃ রাশিয়ার অর্থ জব্দ করে ইউক্রেনকে দিতে অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—পিরোজপুর জেলা সদরের নরখালী গ্রামের মো. রাব্বী ইসলাম ওরফে গোলাম রাব্বী (২৪), বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের মো. আবদুল কারীম (২৭), রামপাল উপজেলার চিত্রা গ্রামের কার্তিক শীল (২৫) ও একই উপজেলার বর্নি গ্রামের বাদশা শেখ (২৩)।
তাঁদের মধ্যে কার্তিক শীল ছাড়া অন্য তিনজন রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উপঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতীয় কোম্পানি সাহারার কর্মী হিসেবে কেন্দ্রে চাকরি করেন। আর কার্তিকও এর আগে এই কেন্দ্রে কাজ করতেন। গতকাল শুক্রবার তাদের ওই চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রে কর্মরত বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :