রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের বাড়ল খাবারের দাম।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাবারের মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। এতে আগের চেয়ে দুপুর ও রাতের খাবারে মোট ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ইতিমধ্যে এ সিদ্ধান্তের নোটিশ বিভিন্ন হলে টাঙানো হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা জানান, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের কথা বিবেচনা না করে প্রতিনিয়ত খাবারের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের স্বার্থে হওয়া উচিত। তবে প্রশাসন বরাবরই শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখায়। খাবারের দাম বৃদ্ধি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বাজেট থেকে ভর্তুকি দিতে পারে প্রশাসন। এটা না করে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে প্রশাসন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি সময় দুপুরে ও রাতের খাবারের দাম ছিল ২৮ ও ২২ টাকা। তবে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক সভার ৪ নম্বর সিদ্ধান্তে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি হলগুলোতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সকল হলে ডাইনিংয়ে দুপুরের খাবারের দাম ৩৫ টাকা এবং রাতের খাবার ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে বিজ্ঞতিতে উল্লেখ করা হয়। নতুন এ সিদ্ধান্তে দুই বেলা খাবারে মোট ১০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেল।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই স্বেচ্ছাচারিতা করছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ব মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা।
শিক্ষার্থীরা ক্ষুধা নিবারনের জন্যই পুষ্টিহীন ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের যখন নাভিশ্বাস উঠে গেছে, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ।’
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ ইসলাম বলেন, প্রতিবার খাবারের মান বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলে দাম বাড়ানো হয়। তবে এতে খাবারের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছু আমাদের স্বার্থে হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ এমপি সাকিবের শপথ
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা ন্যূনতম চিন্তা না করে খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সার্বিক বাজেট থেকে আবাসিক হলের খাবারে ভর্তুকি দেওয়া।’
জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির ফলে ডাইনিং কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডাইনিং পরিচালনা করছেন। তারা অনেকদিন ধরে খাবারের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের কথা চিন্তা করে দুবেলা খাবারে ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে খাবারের মান অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে।’
বিশবিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে শিক্ষার্থী, ডাইনিং কর্মচারী ও প্রাধ্যক্ষদের ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করে নেওয়া দরকার ছিল। শিক্ষার্থীদের ওপর জোর করে কোনো কিছু যেন চাপিয়ে না দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক বলা হয়েছে। আর ডাইনিংয়ে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো বাজেট নেই। ইউজিসিকে বারবার বলার পরেও তারা এই খাতে বরাদ্দ দিচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :