গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ছিলামনিরহাট গ্রামের মাহবুবুর রহমান মাহবুব পুলিশে কনস্টেবল হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন ২০১১ সালে। পুলিশে থাকা অবস্থায় সচিবদের নাম ভাঙিয়ে তিনি চাকরি দেওয়ার প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। প্রতারণা ও চাকরি বিধিভঙ্গের অভিযোগে ২০১৪ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন। ইতোমধ্যে তিনি নিজের গ্রামে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। তার গ্রামে রয়েছে শত বিঘা জমি, দুটি বাড়ি ও দোকান এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র খাঁপাড়ায় নির্মাণ করেছেন কোটি টাকার পাঁচতলা বাড়ি। প্রতিবেশীরা জানান, প্রতিমাসে গ্রামের বাড়িতে মাহবুব জমি কিনতেন। এভাবে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকর্তার পরিচয় দিতেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আল মামুন বলেন, সচিবালয়ে চাকরিরত ভাইয়ের সহযোগিতায় মাহবুব হোটেল ভাড়া করে ঢাকায় প্রতারণার জাল বিছান। বিভিন্ন পদে বেকারদের চাকরি দেওয়ার নামে রাজশাহীর বাঘা, সিলেটের বিভিন্ন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি স্ত্রীর নামে কয়েকটি ব্যাংকে টাকা রাখেন। এভাবে গাইবান্ধার খাঁপাড়ায় ২৬ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনেন। অল্প সময়ের মধ্যে ওই জমির ওপর তিনি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন। এছাড়া তার একাধিক দোকান ও বাড়ি রয়েছে। সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, কখনো কর্নেল ইশতিয়াক, কখনো সচিবালয়ের কর্মকর্তাসহ নানা সময়ে নানা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মাহবুব কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। এভাবেই তিনি কোটি টাকার একাধিক বাড়ি ও জমির মালিক হয়েছেন। একাধিকবার র্যাব ও পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে তিনি আবার নতুন করে প্রতারণা শুরু করেন।
পুলিশে চাকরি হারানোর কথা গোপন করে মাহবুব কখনো বলেন, সচিবালয়ে চাকরি করেন। কখনো সেনাবাহিনীতে আবার কখনো তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন বলে দাবি করেন। প্রতারণার অভিযোগে মাহবুব একাধিকবার জেলও খেটেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার প্রতারণা শুরু করেন। পুলিশ, সচিবালয়, সেনাবাহিনী, বিজিবি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে লোভনীয় চাকরি দেওয়ার নাম করে রাজশাহীর বাঘার রবিউল ইসলাম ও মতিউর রহমানসহ বহু মানুষের কাছ থেকে মাহবুব প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘদিনেও চাকরি না হওয়ায় সবাই টাকা ফেরত চাইলে দেই-দিচ্ছি বলে মাহবুব তাদের সঙ্গে টালবাহানা শুরু করেন।
পরে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা প্রতারণার দায়ে মাহবুবের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বাঘা থানায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দুটি মামলা হয়। মামলা দুটির তদন্ত করে পিবিআই। গাইবান্ধা থেকে প্রতারক মাহবুবকে গ্রেফতার করে পিবিআই রাজশাহী নিয়ে যায়।
এরপর তার সব ফাঁস হয়ে যায়। তবে জামিনে বেরিয়ে তিনি আবার ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি শিক্ষা বিভাগ, হাইকোর্ট চত্বরে দালালি ও চাকরি দেওয়ার নামে নতুন করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। মাঝেমধ্যে গ্রামে আর শহরের বাড়িতে এসে দু-চার দিন থেকে আবার কোথাও ঘাপটি মেরে মাহবুব প্রতারণা চালিয়ে যান।
মাহবুবের স্ত্রী শিরিন মোছা. সামসাদ বেগম এ ব্যাপারে বলেন, বাড়ি কি শুধু আমরাই করেছি। তিনি বলেন, মাহবুব ঢাকায় থাকেন। সেখানে তিনি রিকশা চালান। মাহবুবের ভাই শাহ মকবুল হোসেন বলেন, আমার ভাই পুলিশে চাকরি করতেন। বাড়িতে জমিজমা আছে। এখনো তিনি ঢাকায় কাজকর্ম করেন। এ কারণে তার সম্পদ বেড়েছে।
সম্পদের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে শনিবার বিকালে মাহবুবকে ফোন করা হলে যুগান্তরের গাইবান্ধা প্রতিনিধিকে হত্যার হুমকি দেন। তিনি বলেন, আমি কী করি না করি, তাতে তোর কী? তোকে আমি দেখে নেব। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর দাঁত ভেঙে দেব। এরপর গালি দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
আপনার মতামত লিখুন :