মাংস আমদানি করলে কেজি ৪শ টাকা পড়বে
ভারত, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে গরুর মাংস আমদানি করলে ৪০০ টাকা কেজি পড়বে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যমূল্য নজরদারি করা যায়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শুধু জেলজরিমানা ও পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কোনো সমাধান নয়। ব্যবসায়ীসহ সবার দায়িত্বশীলতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় করা সম্ভব। অল্প সময়ের মধ্যে ডিমের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব না হলে অচিরেই ডিম আমদানির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানান এ সিনিয়র সচিব।
শুক্রবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সুফল পাওয়া যাচ্ছে’ নিয়ে এক ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তপন কান্তি ঘোষ এসব কথা বলেন।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। ছায়াসংসদে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
এ সময় ছায়াসংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক সায়েদুল ইসলাম, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও যুগ্ম কর কমিশনার মেহেদী হাসান তামিম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, অসাধু কারবারি ও মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিলোভী হয়ে উঠলেই বাজার ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসায়ীরা লাভ করলে আমরা দেখি কিন্তু লোকসান করলে তা দেখি না। সরকার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয়। তবে ব্যবসায়ীদের অতিলোভ পরিহার করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
তিনি জানান, পরিবহণ ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি বন্ধ করাসহ সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পারলে ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় সহজ হবে। তবে এক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় রেখে উন্মুক্ত আমদানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ আমাদের ভোজ্যতেল ৯০ শতাংশ, চিনি ৯৯ শতাংশসহ আদা, রসুন, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি আমদানিনির্ভর। উৎপাদক পর্যায়ে সমবায় শক্তি জোরদার করা গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না। তখন তারা নিজেরাই নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করতে সমর্থ হবে। আমাদের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে। ভোগ আকাক্সক্ষাও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারের ওপর। তাই আমাদের কিছুটা সহ্য করে নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভোক্তা-অধিকার আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সমন্বিতভাবে আরও জোরদার করা সম্ভব হলে জনগণ এর সুফল আরও বেশি পাবে। তবে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের রাজনৈতিক দুর্বলতা রয়েছে। যার কারণে চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম প্রায়ই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। সম্প্রতি চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল করায় সম্পৃক্ততার অভিযোগের প্রতিবেদন দেওয়ার পরও অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এতেই বোঝা যায়, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। যার পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :