রাজধানী ঢাকায় শিল্পকলায় ১১৪ দেশের ৪৬৫ শিল্পীর শিল্পকর্ম। রাজধানী ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশের অংশগ্রহণে মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে আগামি ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।
প্রদর্শনী উপলক্ষে থাকবে দেশ-বিদেশের শিল্পী, সমালোচক, বিচারক ও পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণে সেমিনার। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে রয়েছে সেমিনার ‘হোম অ্যান্ড ডিসপ্লেসমেন্ট’। শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্পী ও সমালোচক মোস্তাফা জামান। আলোচনায় অংশ নেবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
প্রদর্শনীর আয়োজন নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১৪টি দেশের মোট ৪৬৫ জন শিল্পী ৭১২টি শিল্পকর্ম নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের থাকছেন ১৪৯ জন শিল্পী ও তাদের ১৫৬টি শিল্পকর্ম।
একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্য থেকে জুরিদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৩টি গ্রান্ড পুরস্কার ও ৬টি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করা হবে। গ্রান্ড পুরস্কারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিজয়ীকে ৫ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হবে। সম্মানসূচক পুরস্কার বিজয়ীরা প্রত্যেকে ৩ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র পাবেন। উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শিল্পীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
এবারের আসরের চার জুরি জগথ ভিরাসিংহে (শ্রীলঙ্কা), নারসেরিন টর (তুরস্ক), ইয়োনা ব্লাজউইক (যুক্তরাজ্য), জ্যারোস্ল সুচান (পোল্যান্ড) সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শ্রীলঙ্কার সমালোচক জুরি জগথ ভিরাসিংহে বলেন, ‘এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল নিসন্দেহে চারুশিল্পের দুই প্রজন্মের মহা মিলনমেলা হতে যাচ্ছে। ১৯৪৭ সালে যে শিল্পীর জন্ম, তিনি যেভাবে বিশ্বকে দেখেছেন বা চিত্রিত করছেন তার সঙ্গে বিস্তর তফাৎ হবে নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া শিল্পীদের। দুই প্রজন্মের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখার অভূতপূর্ব সুযোগ এসেছে এবার।’
যুক্তরাজ্যের শিল্প সমালোচক ইয়োনা ব্লাজউইক বলেন, ‘এবারের আসরের ছবি বাছাইয়ে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষের জীবন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কীভাবে শিল্পীরা তাদের চিত্রকর্ম বা পারফরমেন্স আর্টে তুলে আনছেন, সেগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ বিএনপির আন্দোলনই হলো মানুষ মারা, বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারেনি:প্রধানমন্ত্রী
এদিকে দুই বছর পরপর অনুষ্ঠেয় এই আয়োজন করোনার কারণে ২০১৮ সালের পর কয়েক দফা পিছিয়ে এ বছর আবার শুরু হচ্ছে। শিল্পের এই মহাযজ্ঞ ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে এশিয়ার বৃহৎ চারুকলা প্রদর্শনী হিসেবে।
উল্লেখ্য, শিল্পকলা একাডেমি এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল আয়োজন করে আসছে। ১৯৯৫ সালে সপ্তম এশিয়ান বিয়েনালে প্রথম পারফরমেন্স প্রদর্শিত হয় জাপানের শিল্পী শো কাজাকুরা’র অংশগ্রহণের মাধ্যমে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প আয়োজন বা প্রদর্শনীতে পারফরমেন্স অন্যতম শিল্পভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে এই মাধ্যমটিকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে, এই মাধ্যমের প্রতি শিল্পীরা উৎসাহিত হচ্ছে এবং প্রসারিত হচ্ছে এই শিল্পধারা। বিগত কয়েকটি প্রদর্শনীর মতো ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতেও পারফরমেন্স আর্টের সক্রিয় সম্পৃক্ততা থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :