পদ্মা মধুমতি সেতু রুটে যাতায়াত যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কি:মি: কমেছে। গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলার সীমান্তের কালনা পয়েন্টে নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতী সেতু ১০ অক্টোবর সোমবার উদ্বোধন হয়েছে। ওইদিন থেকেই সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন।
দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই সেতু উদ্বোধনের ঘোষণায় গোপালগঞ্জ ও নড়াাইলসহ এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আগে থেকে ই উচ্ছ¡সিত ছিল। সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-এর প্রকল্প পরিচালক শ্যামল ভট্টাচার্য জানান, ১০ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কালনা পয়েন্টের মধুমতি সেতু ওনারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা সেতু একইসঙ্গে উদ্বোধন করবেন।
উদ্বোধনের দিন থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। যশোর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমেছে ১১৩ কিলোমিটার। নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলা এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর উপর নির্মিত এই সেতু উদ্বোধনের ফলে এই অঞ্চলের মানুষের ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হবে।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে কালনা সেতু নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হবে কালনাঘাটের মধুমতী সেতু। এই সেতুর পূর্ব পারে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা শংকরপাশা ও পশ্চিম পারে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কলনা। শংকরপাশা গোপালগগঞ্জ জেলা সীমান্তের গ্রাম। কালনা নড়াইল জেলা সীমান্তের গ্রাম। দুই জেলার সীমান্তে নির্মিত সেতু ঢাকার সাথে অন্তত ১০ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দেবে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নড়াইলের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুুতি সভা হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদফতর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান জানান, সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৬.১ মিটার। উভয় পাশে ৬ লেনের সংযোগ সড়ক রয়েছে, যার দৈঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৯৬০ কোটি টাকা। সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি স্টিলের স্প্যান। ধনুকের মতো বাঁকা এ স্প্যান তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। এই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)।
ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। মধুমতি সেতু পারাপারের জন্য বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা,
দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মাঝারি ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা করে টোল নিধারত করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ এমএম কলেজ আসাদ হলে বহিরাগত মাদকসেবীদের হামলা
মধুমতি সেতু চালু হওয়ার ফলে আমরা এই অঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর পুরো সুফল বোধ করতে পারবো। এখন থেকে সকালে রওনা দিয়ে কাজ শেষ করে আবার বিকালে নড়াইলে ফিরে আসতে পারব। যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক সংস্থার সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, কালনা ঘাটে মধুমতি সেতু চালু হলে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এই অঞ্চলের মানুষের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হবে।
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজামুদ্দিন খান লিলু বলেন, কালনাঘাটে নির্মিত মধুমতি সেতু এই অঞ্চলের মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি অনন্য উপহার। এই উপহারের জন্য আমরা নড়াইলবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট চিরকৃতজ্ঞ। সেতুটি চালুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের সড়কপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে যাবে।
এশিয়ান হাইওয়েতে থাকা সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকাও রাখবে। মধুমতি সেতু চালু হওয়ার পরে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং
নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমে আসবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে।
[…] পদ্মা মধুমতি সেতু রুটে যাতায়াত যশোর থ… […]