সম্প্রতি বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে আলাপ-আলোচনা, মিটিং-মিছিল, প্রচার-অপপ্রচার চলছে, এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শুধু যে এটা দেশের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ আছে তা কিন্তু নয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পৃথিবীর মোড়ল দেশ এবং শান্তি ও মানবতার জন্য কাজ করা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনও হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে। ব্যাপারটি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ও দেশের জনগণের জন্য মোটেও কোনো শুভবার্তা বয়ে আনছে না।
লক্ষণীয়, দেশের সংসদে না থাকা একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিদেশি শক্তিকে জোর করে ডেকে আনছেন দেশের ভেতর তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য সহযোগিতা করতে। দলটি অতীতে বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় আসীন থেকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য এমন মঙ্গল কিছু করেনি যে, দেশের মানুষ তাদের বিগত পনেরো বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় বসাবে। যে কারণে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে বিদেশি সেসব শক্তিকে বিশ্বাস করিয়ে দেশের ভেতর অগণতান্ত্রিকভাবে তাদের ক্ষমতায় বসানোর পরিবেশ তৈরি করতে বাধ্য করার অপচেষ্টা করে আসছে অনেক দিন ধরেই। বলা যায়, এসব কারণে দেশের বর্তমান সরকার অনেকটাই বিদেশিদের অযাচিত নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। বিদেশিদের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে এর মধ্যে প্রতিনিধি দল এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে যাওয়ার পর অনেকটাই যেন বিরোধী দলের কথা ও কাজে বিশ্বাস হারাতে বসেছে। বিপরীতে সরকারের পক্ষে তাদের মতপ্রকাশেরও চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল অনেকটাই যেন পালটাপালটি কর্মসূচি দিতে থাকে ঢাকা শহরকে অবরোধ করতে। এটা অনেকটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে নিজেদের জনপ্রিয়তা এবং পেশিশক্তি প্রদর্শন বা শোডাউন করা। আমার বিশ্বাস দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণ কোনোভাবেই মন থেকে তাদের এসব কর্মসূচিকে সম্মতি জানাতে পারে না। উলটো এসবে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়েছে, যে কারণে তারা তাদের কর্মসূচি দেখে হতাশ হচ্ছে। তারপরও আমার মনে হয়েছে, বিদেশি শক্তির কাছে নিজ নিজ দলের অবস্থান এবং জনপ্রিয়তা প্রদর্শনের চেষ্টায় দেওয়া এসব কর্মসূচি ছিল বলার মতো।
এক দল সরকারে থেকে এবং আরেক দল সরকারের বাইরে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এলেও হঠাৎ করে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যেভাবে নিয়মনীতি না মেনে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি পালন করে, এতে তারা নিজেরাই যেন লেজেগোবরে গোলমাল লাগিয়ে ফেলে। এসব করতে গিয়ে উভয় দলই তাদের পুরোনো চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে, তাতে সাধারণ মানুষ অবাকই হয়েছে।
সেদিন তারা ঢাকার ভেতর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে যেভাবে দেশের অভ্যন্তরে আগের মতো আগুনসন্ত্রাস করার মধ্য দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, এতে তাদের প্রতি বিদেশিরাও নাখোশ বলেই মনে হলো। যার জন্য এতদিনের জল্পনা-কল্পনা, ইনভেস্ট যা-ই বলি না কেন, সব যেন তাদের নষ্ট হয়ে গেছে! এমনকি প্রত্যাশিত ফলও আর তাদের ঘরে না ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলটির সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি ভোল পালটে বক্তব্যে দিয়েছেন। বিদেশিদের ওপর বিষোদ্গার করে বক্তব্যে বলেছেন, আমাদের শক্তি আমাদের দেশের জনগণ। বিদেশিদের ওপর যেন আর তাদের কোনো ধরনের আশা-ভরসা নেই।
এদিকে আইএমআই নামের একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা যাচাই করতে একটি জরিপ করেছে। ৫ হাজার লোকের ওপর করা এ জরিপের ফল প্রকাশও করা হয়েছে, যা দেখে বাংলাদেশ সরকার আনন্দে ভাসছে! অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৭০ ভাগ ভোট দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের আমলে দেশ ভালোভাবে চলছে-এর পক্ষে মত দিয়েছে। তার মানে বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে, এতে দেশের জনগণ খুশি।
বিষয়টির সত্যতা মেনে নিয়ে বলছি, দেশ আমাদের উন্নয়নের রোল মডেল হতেই পারে। কিন্তু জরিপের এ ফল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনই ঘটা করে বলা যায় না। দেশের মানুষ অনেক সহজ সরল, তারপর আবার ধর্মভীরু। অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে, ভোটাররা দিনে বলে এক কথা, রাতে বলে আরেক কথা। ভোটকেন্দ্রের বাইরে বলবে এক কথা, ভোট দিতে গিয়ে ভেতরে ঘটাবে আরেক ঘটনা।
দেশে ফল ঘোষণার সময় রিমোট নিয়ন্ত্রণে যদি ভুল হয়, তাহলে ভুল হতে বাধ্য দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলও। এ নিয়ে যত জরিপই করা হোক, তা মিথ্যা প্রমাণিত হতেই পারে। দেশের আগামী নির্বাচন সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা হোক-এটা সবারই একান্ত কামনা ও প্রত্যাশা।
আপনার মতামত লিখুন :