ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ধরা পড়া ছাত্রদলের শীর্ষ ছয় নেতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির যুগ্মপুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী। রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। এদিকে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদলের ৬ নেতার মধ্যে দুজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর এবং চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, টেকনাফ ও পাবনা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে মজুত করেছে ছাত্রদলের ছয় নেতা। এসব আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তারা নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিল। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশেই তারা সেই পরিকল্পনা করেছে। তবে এর আগেই তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায়।
তিনি জানান, গ্রেফতার ছাত্রদল নেতারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম ওরফে জিসান, সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ বিল্লা, ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান ওরফে হাসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদত হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর এবং ঢাবি শাখার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ। তাদের কাছ থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৬ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, শনিবার লালবাগ থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ছয় ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে শুক্রবার তাদেরকে আজিমপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান ডিবির যুগ্ম কমিশনার।
গ্রেফতার ছাত্রনেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা রাজপথে দলের শক্তি বাড়াতে চাচ্ছিল। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া-প্রদর্শনের মাধ্যমে জনমনে ভীতি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে বর্তমান সরকারকে বিব্রত করতে তারা লালবাগে অবস্থান করছিল। তাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অস্ত্র ও জব্দ হওয়া অস্ত্রের ছবি পাওয়া গেছে। তাদের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। যারা অস্ত্র সাপ্লাই দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলছে।
তিনি আরও জানান, শনিবার রাতে নাইটিঙ্গেল মোড়ে পৃথক অভিযানে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহাম্মেদ রবিনসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি জানান, পুলিশের কর্তব্যে বাধা দেওয়া ও সরকারবিরোধী উসকানির অভিযোগে শনিবার যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশের করা মামলায় তানভীর আহাম্মেদ রবিনসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় যুবদল সাংগঠনিক সম্পাদক সাদরুল আলম শেখরসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে আদালত প্রতিবেদক জানান, ডিবির হাতে গ্রেফতার ছাত্রদলের ৬ নেতার মধ্যে দুইজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্য চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রিমান্ড মঞ্জুর করা আসামিরা হলেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম ওরফে জিসান ও ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ বিল্লা।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান ওরফে হাসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদত হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর।
রোববার ছয়জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি মমিনুল ও আরিফ বিল্লাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের গুলশান জোনের সাব-ইনস্পেকটর মো. আসাদুজ্জামান। অন্য চার আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
আপনার মতামত লিখুন :