আলদি বাজারে প্রতিদিন ৪টি দোকানে ৩০ থেকে ৩৫ মণ মাঠা বিক্রি হয়। মাঠা খেতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক মানুষ।
দেশের অনেক এলাকার মাঠা খেয়েছি। আলদির মাঠার স্বাদ কোথাও পাইনি। বিখ্যাত এ মাঠা খেতে প্রতি মাসে একবার অন্তত নারায়ণগঞ্জ থেকে আলদি আসি। আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে যাই।’ এসব কথা বলছিলেন নজরুল ইসলাম। ভোজনরসিক নজরুলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর বিখ্যাত আলদি মাঠার স্বাদে বুঁদ তাঁর মতো আরও অনেকে।
এই মাঠার স্বাদ নিতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসেন টঙ্গিবাড়ীর আলদি বাজারে। স্বাদে ও মানে অনন্য হওয়ায় গত তিন দশকে মাঠা ওই এলাকার ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই মাঠার জনপ্রিয়তা কেবল বেড়েছে। খাঁটি দুধের এই মাঠা বিক্রি করে দেশব্যাপী খ্যাতি পেয়েছেন এখানকার মাঠা বিক্রেতারা। প্রতিদিন ৪টি ভাসমান দোকানে ৩০ থেকে ৩৫ মণ মাঠা বিক্রি হয় আলদি বাজারে।
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, আলদি বাজার এলাকায় সেতুর ঢালে কাঠের মাচার ওপর বড় পাতিল ভর্তি করে ছানা, মাঠা ও মাখন সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পাশেই মাঠার মাখন তুলছিলেন মাঠা বিক্রেতা কমল ঘোষ। ভোরের আলো ফুটতেই মাঠাপিপাসু মানুষের ভিড় শুরু হতে থাকে মাঠার দোকানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাঁটি মাঠার স্বাদ নিতে আসা লোকজনের ভিড় বেড়ে যায়। ভাসমান দোকানের চারদিকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি নিয়ে গ্লাসভর্তি মাঠা খাচ্ছেন ভোজন রসিকেরা। নিজে খাওয়ার পর বোতল ভর্তি করেও নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
ঢাকার ইস্কাটন থেকে মাঠা খেতে এসেছেন রিয়াসাত নামের একজন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ব্লগে আলদির মাঠার ভিডিও দেখেছিলাম। আজ ভোরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে এসেছি। এখানকার মাঠা খেয়েছি। মাঠার স্বাদ অতুলনীয়। ভাবছি, সময়-সুযোগ পেলেই মাঠা খেতে আসব।’ এই মাঠার স্বাদ ভোলার নয় জানিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মো. তাজউদ্দিন বলেন, ‘আলদির মাঠার কথা অনেক শুনেছি। আজ দুই বাচ্চা এবং বন্ধুদের নিয়ে এসেছি। পরিবারের জন্য ছয় লিটার মাঠা সঙ্গে নিয়েছি।’
মাঠা বিক্রেতা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০ বছর ধরে আলদি বাজারে মাঠা বিক্রি হচ্ছে। এখানকার মাঠা দেশের অন্য যেকোনো মাঠার চেয়ে আলাদা স্বাদের। প্রথম দিকে শুধু কমল ঘোষ নামের এক ব্যক্তি একাই মাঠা বিক্রি করতেন। তাঁর মাঠার স্বাদের জন্য সুখ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, দোহার, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন মাঠার স্বাদ নিতে আসেন। সাত-আট বছর ধরে কমল ঘোষের সঙ্গে আরও কয়েকজন মাঠার ভাসমান দোকান নিয়ে বসেছেন। স্বাদে বৈচিত্র্য ও খাঁটি দুধের হওয়ায় আলদি মাঠার কদর বেশি।
কথা হয় কমল ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর আগে মাঠার ব্যবসা শুরু করেছিলাম। শুরুর দিকে ছোট পাতিলে অল্প করে একাই মাঠা বিক্রি করতাম। ধীরে ধীরে মাঠার স্বাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের আলদির মাঠা এখন সারা বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে মাঠা খেতে আসছেন। খুব কষ্ট করে সারা রাত মাঠা বানাই। ভোর থেকে বিক্রি করি। দীর্ঘ সময় মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে মাঠা খাচ্ছেন। এটা দেখে কষ্ট ভুলে তৃপ্তি পাই।’
[…] আরও পড়ুনঃআলদির মাঠার অনন্য স্বাদ নিতে ভিড় […]