যশোরে ৫জনের মদ্যপানে মৃত্যু ৩। নেশাজাতীয় বিষাক্ত মদ্য পান করে যশোরে তিনজনের মৃত্যুবরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুইজন।
যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে তারা ওই নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করলেও বিষয়টি শুক্রবার রাতে জানাজানি হয়। মৃতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে ইসলাম (৪৫), আবু বক্কর মোল্লার ছেলে আবুল কাশেম (৬৫) শাহজাহান আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২৯)।
এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সিতারামপুর গ্রামের মনিরুদ্দীনের ছেলে বাবলু (২৮) এবং একই গ্রামের আনোয়ার মোড়লের ছেলে রিপন হোসেন মোড়ল (৩৬)। প্রথমে এরা যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও এখন আর সেখানে নেই। তারা অন্যত্র গোপনে চিকিৎসা গ্রহন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের একটি মেহগনি ও লিচু বাগানে ওই পাঁচজন বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করেন। রাতেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজ নিজ বাড়িতে গ্রাম্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন।
কিন্তু অবস্থায় অবনতি হলে ইসলামকে বৃহস্পতিবার ভোরে (২৬ জানুয়ারি) মদ খাওয়ার বিষয়টি গোপন করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মারা যায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ছাড়পত্র ছাড়াই মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে চলে যায়। এদিকে, বাকীরাও ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে তারা একে একে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে স্বজনেরা ।
এর মধ্যে জাকির হোসেন দুপুর পৌনে একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই মারা যান। এরপরই তাদের বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা জানাজানি হলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি বাবলু ও রিপন হোসেন হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে সরে পড়েন। এছাড়া আবুল কাশেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা যান।
প্রাথমিক পর্যায়ে তার লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলেও পরে আবারো লাশ ফেরত এনে পোষ্টমর্টেম সম্পন্ন হয়। সূত্র বলছে, গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে সদরের সীতারামপু গ্রমের বালুর কাছে মদ সেবন করেন অন্তত ২৪ জন। যারা সবাই কমবেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন একই গ্রামের রিপন, আনোয়ার, বাবলু, কালাম ও নজরুল।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার আহমেদ তারেক শামস জানান, দুইজনের লাশ পরিবার নিয়ে গেছে। একটি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে। কোতয়ালী থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে ক্ষতিয়ে দেখছে। নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনে মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার খবর তারা পেয়েছেন।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা অন্যকেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। খবর পাওয়ার পর বিষয়টি তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন। তবে পুলিশ গত তিনদিন ধরে মদের স্পট এলাকায় কয়েকবার গেছে ঘটনার তদন্তে। যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ডিডি হুমায়ুন কবীর খন্দকার জানান, এরকম ঘটনা আমার জানা নেই। আপনি বলছেন বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
যশোরে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তদন্তটিম গঠন করে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ জানান, স্বজনরা তথ্য গোপন করে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে রোগীদের মুখে গন্ধ থেকে বোঝা যায় অতিরিক্ত বা বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন জানান, এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী অসুস্থ ও মৃতরা অতিরিক্ত বা বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেছিলেন। কিন্তু তাদের স্বজনরা সেই তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আরও পড়ুন: যশোরে অরক্ষিত রেলক্রসিং দায়িত্ব পালনে গেটকিপার অনীহা
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই স্বজনরা লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এদিকে রামনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ নিহতদের খোজ খবর নিয়েছেন। তিনি শনিবার রাজারহাট সীতারামপুর, আবাদ কচুয়ার গ্রামবাসীর খোজ খবর নেন।
আপনার মতামত লিখুন :