যশোরে মিথ্যা জখমি সনদ ও ডাক্তারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা।
লাখ টাকা উৎকোচ না পাওয়ায় মিথ্যা জখমি সনদ প্রদানের অভিযোগে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার মুরসালিনুর রহমানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলাটি করেছেন ঝিকরগাছার রাজাপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে মিলন মাহামুদ। এর আগে তিনি একই বিষয়ে দুদকে অভিযোগ করেন। অন্য আসামিরা হলেন, উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মৃত কেনায়েত আলীর ছেলে মো. রফিক, মৃত নুর ইসলামের ছেলে সেলিম রেজা, নওশের আলীর ছেলে লাবু, মৃত ওয়াজেদ সরদারের ছেলে নূর ইসলাম ফকির, মৃত জালাল সরদারের ছেলে মুনতাজ, আকছেদ আলীর ছেলে কবির হোসেন, মৃত হানিফের ছেলে পলাশ ও সাইফুল ইসলামের ছেলে মিঠু।
বুধবার যশোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবির উদ্দিন প্রামানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোরকে আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম। মামলায় বাদী মিলন মাহামুদ উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাদীর ভাই জাকির হোসেন পিপুল চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন।
তার ভাইয়ের প্রচারণার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর মিলনসহ ৩০-৩৫ জন কর্মী মোটরসাইকেলযোগে উপজেলার বেজিয়াতলা মালোপাড়া মোড়ে পৌছালে ডাক্তার মুরসালিন বাদে অন্য আসামিরাসহ
অজ্ঞাত পরিচয়ের সন্ত্রাসীরা হাসুয়া ও গাছি দা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। ওইসময় মিলনের সাথে থাকা মাহাবুবুর রহমান বুড়ো, হাসেম আলী, মিলন ও সিরাজুল ইসলামকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে
সন্ত্রাসীরা।
হামলায় বুড়োর পিঠে কোপ মারে আসামি রফিক। ক্ষত স্থানে তার ১০ টি সেলায় দেয়া হয়। এছাড়া আসামি মুনতাজের কোপে বুড়োর বাম কিডনির উপর মারাত্মক ক্ষত হয়। সেখানে ১২ টি সেলাই দেয়া হয়। এছাড়া, বাদীর সাথে থাকা হাশেমের ডান উরুতে মারাত্মক জখম হয়। সেখানে সাতটি সেলাই দেয়া হয়। আরেক সঙ্গী মিলনের গলায়, কানে, উরুতে কোপ দেয় আসামিরা। তার শরীরে মোট ১৫ টি সেলাই দেয়া হয়।
গুরুতর জখম অবস্থায় আহতদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় বাদী ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ১৪ জনের বিরুদ্ধে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন। ওই মামলার জখমিদের চিকিৎসা সনদ সংগ্রহ করতে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি বাদী ডাক্তার মুরসালিনুর রহমানের কাছে যান। তখন সঠিক জখমি সনদ দেয়ার জন্য ডাক্তার মুরসালিনুর রহমান এক লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যথায় সামান্য জখম হয়েছে উল্লেখ করে সনদ দেয়া হবে বলে জানান। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকালে মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব করেন। তার প্রেক্ষিতে ডাক্তার মুরসালিনুর রহমান মাহাবুবুর রহমান, হাসেম আলী ও মিলনের ধারালো অস্ত্রের গুরুতর জখম থাকা সত্তে¡ও ভোতা অস্ত্রের সামান্য জখম হয়েছে উল্লেখ করে জখমি সনদ প্রদান করেন।
বাদীর দাবি, ডাক্তার মুরসালিনুর রহমানের চাহিদামতো উৎকোচ না দেয়ায় আসামিদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে এ ধরনের মিথ্যা ও ভুয়া জখমি সনদ প্রদান করেন। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়,জখমি সনদে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় বাধ্য হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে গুরুতর ধারার পরিবর্তে সাধারণ ধারার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করেছেন। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, একই মামলায় বাদীর চাচা সিরাজুল ইসলামের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাতের আঙ্গুল কেটে পড়ে যায়।
অথচ ডাক্তার তার ক্ষেত্রেও নরমাল আঘাত ও ভোতা অস্ত্রের আঘাতের ক্ষত উল্লেখ করেন। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ডাক্তার মুরসালিনুর রহমান সেটি সংশোধন করে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কথা উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে প্রথমে তারা দুদকে অভিযোগ করেন। কিন্তু কোনো ব্যাবস্থা না নেয়ায় আদালতে মামলা করেছেন।
আরও পড়ুন: বেনাপোলে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০২৩ পালিত
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ডাক্তার যেটি করেছেন সেটি অমানবিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে দুদককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :