রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গড়ে উঠছে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে প্রথম ধাপ পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে ৫২৫টি ঘর। যা ইতোমধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের ২য় ধাপে ৩৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যার কয়েকটি হস্তান্তর করা হলেও অবশিষ্টগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে চতুর্থ পর্যায়ে পঞ্চম ধাপে আরও ১০২টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন ২ শতক জমি, টয়লেট ও রান্নাঘরসহ ২রুমের ঘর পাবেন। এছাড়াও বিদ্যুত সংযোগ ও পানি সরবরাহসহ পরিবারগুলোকে কর্মসংস্থানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার পৃথক উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক দাঁড়িয়ে থাকা প্রকল্পের রঙ্গিন ঘরগুলো পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরগুলো নতুন কোন শহরের ঠিকানা।

উপজেলার মদনখালি ইউনিয়নের কাদিরাবাদের বাসিন্দা তাহেরা বেগম জানান, হায়রে কপাল জায়গা-জমি নেই, নিজের ঘরও নেই, স্বামীও বেঁচে নেই। ফলে শরম লজ্জা ত্যাগ করে অসহায় হয়ে মেয়ের বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কোথাও কোন ঠাঁই না পেয়ে আশ্রয়ের ঘর পেতে উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করি।

সরকারি পাকা ঘরের স্বপ্ন দেখি আর ভাবতে থাকি আমার কপালে কবে জুটবে ইটের বাড়ি। সরকারি অফিসে যোগাযোগের পর শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে একটি ঘর আমি বরাদ্দ পেয়েছি। ঘর পেয়ে আমি খুব-খুশি বাবা। আমার কিছু থাক, বা না থাক, এখন আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। বড়আলমপুর ইউনিয়নের পাট উজিরপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পেয়ে আব্দুর রশিদ ও শহিদ মিয়া জানান,পূর্বের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর চেয়ে বর্তমানের ঘরগুলো নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ১’শ বছরেও এ ঘরগুলোর কিছুই হবে না।

ওরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এলাকাবাসী জানান, প্রকল্পের ঘরগুলো এখন মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘর তৈরিতে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সব সময় তদারকি করছেন, যে কারণে নির্মাণ সামগ্রী এবং নির্মাণ কাজ মানসম্মত। পাট উজিরপুর গ্রামে একসাথে অনেকগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করায় প্রকল্পটির সৌন্দর্য ফুটে উঠে দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।

ছোট ছোট ঘরগুলোতে উন্নত মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় দীর্ঘস্থায়ী হবে। অসহায় মানুষগুলো তাদের দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে রঙিন এ ঘরে বসবাস করবেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সঠিক মানের সামগ্রী দিয়ে। কাজের গুনগতমান ভালো রাখতে অফিসের লোকজন সবসময় ইট, সিমেন্ট, রড এবং মিস্ত্রীর হাতের কাজ তদারকি করছেন।

নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ভ’মিহীনও গৃহহীন পরিবারগুলোর কাছে দলিলমুলে হস্তান্তর করা হবে। পীরগঞ্জের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের স্বপ্নপূরণ করতে উন্নত মানের গৃহ নির্মাণ করে তাদেরকে উপহার দিতে চাই। প্রতিটি ঘরের জন্য ভালোমানের মালামাল সরবরাহ করা হয়। দক্ষ রাজমিস্ত্রী ও সরকারের গৃহীত নকশা অনুযায়ী ঘরগুলো নির্মাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নির্মাণাধীন ঘরগুলো পূর্বের ঘরের চেয়ে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: ত্বকী ফয়সাল তালুকদার বলেন, চলমান প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে শুধু ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য। যাচাই বাছাইয়ের পর এলাকার ভ’মিহীন ও গৃহহীনদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তির কাজে কোনপ্রকার গাফিলতির আশ্রয় নেয়া হয়নি।

আরও পড়ুনঃ শেরপুরের ৩ আসামীর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ড

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সুন্দর করতে সবসময়ই তদারকি করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূুমিহীন ও গৃহহীন মানুষগুলো যাতে স্বাচ্ছন্দে সুন্দর ভাবে ওই ঘরে জীবনযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্ল্ষ্টি কর্মকর্তারা।

প্রতিটি এলাকায় আমরা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আবেদন সংগ্রহের পর যাচাই-বাছাই-এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ ২ ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা করে আসছি। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলার সকল ভ’মিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের পর এ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘরপ্রাপ্তি শতভাগ ঘোষণা করা হবে।