শিক্ষাগুরুর দৈন্যতা
শাহানাজ পারভীন
সোনালী ব্যাংকের মেসেজটা এখনো আসছেনা!!
মাসের ৪/৫ তারিখ হয়ে গেলো,বেতনটা আজও এলোনা।
ঘরের চাল ডাল ফুরিয়ে গেছে,
মেয়েটার খাতা কলমও শেষ।
বাড়িওয়ালা বারবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে বাড়ি ভাড়ার জন্য।
বাকীর দোকানী না দেখে তাই পিছনের চিপা গলি দিয়ে বের হতে হচ্ছে দুদিন পর্যন্ত।
আর আমার সহধর্মিণী? সেতো দুইতিন দিন পর্যন্ত কথা বলা-ই বন্ধ করে দিয়েছে আমার সাথে।
আর দশজন মানুষের মতো আমি যে তার ছোটখাটো বায়নাগুলোই মেটাতে পারিনা।
মাসের ১৫ তারিখ পাড় হলে আর মাস, মাংস মুখে পরে না।
বাকী দিনগুলো সবজি,ডাল দিয়ে চালিয়ে নিতে হয়।
বউয়ের অভিযোগ পাশের বাসার কেরানীবাবুও কতো ঠাটবাট করে চলছে।
বউয়ের তার নিত্য নতুন শাড়ি।
আর আমার বরের!!
শুধু ব্যক্তিত্বের দম্ভ।
সবাই তাকে সম্মান করে,
শ্রদ্ধা করে।
ঘর থেকে বের হলেই শত সহস্র সালাম পায়।
বলি, সম্মান কি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবো?
কে বলেছে প্রাইমারি স্কুলের পন্ডিত হতে?
পন্ডিত না হয়ে ওই কেরানি হতে পারতেনা???
আমি নিজেকে অযোগ্য স্বামী ভেবে সব কথাগুলো হজম করে যাই।
ওর ওই চেঁচানোর মধ্যেও তো কতো কষ্ট আছে।
মেয়েটার শত অভিযোগ গদ গদ স্বরে বলতে থাকে।
একটা সময় ওদের অভিযোগ শুনে ভিষণ কষ্ট পেতাম।
এখন সয়ে গেছে।
যে কয়টা টাকা মাইনে আসে তাতে তিন,চারজনের পরিবার মাসের অর্ধেকটা অনায়াসে চলতে পারে।
আমাকে যে পুরো মাস চালাতে হচ্ছে।
ওরা হয়তো এসব বুঝেনা বলেই এমন করে।
ছোট খালা ফোন করেছিলো।
সে নাকি খুব অভাবে আছে।
আমার কাছে হাজার পাঁচেক টাকা চাইছে।
মা মরার পর খালা ই আমাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছে।
আবদার সে করতেই পারে।
হয়তো আমার ফোনের জন্য অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছে ছোট খালা।
আমার মোবাইলের মেসেজের মতো
খালাও একটা মেসেজের অপেক্ষায় আছে!!
আমাকে ক্ষমা করে দিও খালা।
আপাতত আমি তোমায় কোন টাকা দিতে পারছিনা।
খালা জানেন না,
স্ত্রী জানেন না,
মেয়ে জানেন না
জানেন না ওই বাড়িওয়ালা কিংবা বাকী দোকানের দোকানদার
সময় বদলেছে,
পৃথিবী বদলে গেছে।
সভ্যতা তরতর করে এগিয়ে চলছে।
কিন্তু আজ এই দিনেও বদলায়নি পন্ডিত মশাইয়ের সাথে লাট সাহেবের ব্যবধান।
আরও পড়ুন: শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে সে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না, নন্দাকে জয়া
পরিচ্ছন্ন পরিপাটি পোশাকের আড়ালেও রহিত হয়নি পন্ডিত মশাইয়ের পেটের ক্ষুধা।
আমি এ যুগের শিক্ষক,
কিন্তু লাট সাহেবের কুকুরের সেই এক ঠাংঙের মতোই এখনো আমার পারিশ্রমিক।
কবে….
আর কবে পাল্টাবে এই ব্যবধান!
আর কতোদিন চোরের মতো খিড়কি দিয়ে ঢুকতে হবে ঘরে।
আর কবে দৈন্যতা বিদায় নেবে শিক্ষাগুরুর আবাস থেকে…..
[…] শিক্ষাগুরুর দৈন্যতা, শাহানাজ পারভীন […]