যশোরে কৃষি সফলতায় বাঁধা কপি রপ্তানী চুক্তিবদ্ধ সুফলভোগী শতাধিক কৃষক। যশোর থেকে আগামি দুই মাস ফেব্রয়ারি ও মার্চ মাস নাগাদ ২০ লাখ পিস বাঁধাকপি রপ্তানি করার টার্গেট ধার্য্য করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে এবার কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যশোর কৃষি বিভাগের তদারকিতে আন্তর্জাতিক মানের সবজী উৎপাদন হয়েছে।
গোটা দেশের মধ্যে যশোর থেকে এবার দেড় কোটি টাকার বাঁধা কপি (পাতাকপি) বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রপ্তানি করা হবে। এ অঞ্চলে বাধা কপির দাম কমে যাওয়ার মুহূর্তে এই রপ্তানি শুরু হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছেন যশোর সদর উপজেলার শতাধিক কৃষক। বকেটি এগ্রোবেজ প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান যশোরের চুড়ামনকাটি এলাকায় ওয়ার হাউজ ও ফ্যাক্টরি স্থাপন করে কৃষকদের সাথে সমন্বয় করে চলেছে। একই সাথে গুনগত মান নিরুপণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষিবিভাগ। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে জাহাজে যাচ্ছে এই কপি।
মালয়েশিয়ায় ২২ হাজার কেজির একটি চালান গেছে চলতি বছরের প্রথম চালান হিসেবে। আর অপেক্ষায় সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের চালান। কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে যশোর থেকে বিদেশে কপি রপ্তানি শুরু হয়েছে। চলতি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি দুইমাসে যশোর থেকে বাধা কপির অনেকগুলো চালান যাবে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে। ওই তিন দেশের সবজী ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে ঢাকার একটি এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেড যশোর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের সাথে চুক্তি করেছে। আর সলিডারিড্যাট নেটওয়ার্ক এশিয়া (এসএনএ) তাদের সফল নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে যশোর কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছে।
জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন যশোরও এই প্রক্রিয়ায় পার্টনারশিপে রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বাইরে। এর আগে চাষের শুরুতেই সলিডারিড্যাট বাংলাদেশ ও জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন কৃষক গ্রুপ তৈরি করেছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই দুইমাসে ২০ লাখ পিস বাঁধা কপি রপ্তানি করার টার্গেট রয়েছে। কৃষকদের পরিবহন ও প্রসেসিং খরচ কমিয়ে সরাসরি মাঠে চলে যাচ্ছে রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি। যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় যশোরের চারটি ইউনিয়নের তৃনমুল পর্যায়ের কৃষককে এই কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।
হৈবৎপুর, চুড়ামনকাটি, লেবুতলা ও কাশিমনগরের ১৫০ জন কৃষককে এই সুবিধাভোগীর আওতায় আনা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল নানা সাপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাঁধাকপি তৈরি করা হয়েছে। এক একটি কপির ওজন কমপক্ষে দেড় কেজি, যা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মাফিক ওজন। যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক মানের কপি উৎপাদন হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন। ৫টি রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান ওই প্রত্যয়নের আলোকে কপি সংগ্রহ করছে এবং করবে। বাধাকপি ছাড়াও বেগুন ও ফুল কপির চালান এবার রপ্তানি করা হতে পারে।
এরপর একে একে টমেটো, সিম, করলা, উচ্ছে, পেঁপে, মাশরুম, মরিচ বীজ, কলা, লিচু, কুল, পেয়ারা, ভুট্টা, আমলকি, মাশরুম, এলভেরা, ব্রাম্মি, পিপুল কালোমেগ, চুইঝাল, গাছ আল, নারকেলসহ ২০ প্রকার উচ্চ মূল্যের ফসলও রপ্তানিতে প্রাধান্য পাবে বলে সূত্রের দাবি।
বিগত কয়েক বছরে কৃষি বিভাগের নানা সাফল্যকে ছাপিয়ে বড় সুখবর এনে দিয়েছে বাধা কপিতে। কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নের উচ্চ মূল্যের ফসলের মধ্যে বাধা কপিতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে গোটা কৃষি সেক্টরে। যশোরের কৃষকের ক্ষেতে উৎপাদিত বাধা কপি পৌঁছে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানের বাজারে। প্যাকেজিংয়ের আগে আব্দুলপুরের কৃষি পণ্য সংগ্রহ ও বিপনন কেন্দ্রসহ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে বাছাই ও প্যাকেট জাত করা হচ্ছে।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাজ্জাদ হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক মানসম্মত সবজী, তথা বাধাকপি উৎপাদন সরাসরি মনিটরিং করছে উপজেলা কৃষি অফিস। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে সার্বিক কাজ এগিয়েছে। উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট শতভাগ সফল। এতে ভিন্নমাত্রা যুগিয়েছে বিদেশে কপি রপ্তানি। তাও আবার নির্দিষ্ট করে বললে যশোর থেকে। এর আগেও কয়েক বছর রপ্তানি হয়েছে।
দেশের মধ্যে যশোর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে কপি রপ্তানি গৌরবের বিষয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে যশোর তথা সারা দেশের বাধাকপি নিঃসন্দেহে উচ্চ মুল্যের সবজী হিসেবে সমধিক পরিচিতি পাবে। বাধাকপি ছাড়াও আগামিতে বেগুন ও ফুল কপি, টমেটো, সিম, করলা, উচ্ছে, পেঁপেঁ, আলু রপ্তানিতে প্রাধান্য পাবে। আগামি বছরের টার্গেট ইউরোপের দেশগুলো। পোকামাকড় বিহীন সবজী চাচ্ছে তারা। সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুনঃ যশোর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ২ বছর নির্মাণ কাজ বন্ধ
এ ব্যাপারে সলিডারিড্যাট নেটওয়ার্ক এশিয়ার (এসএনএ) সফল প্রকল্পের যশোরের প্রোগ্রাম অফিসার রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী জাানান,যশোরাঞ্চলে বাধা কপি চাষীদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যৌথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যশোর থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজী রপ্তানি শুরু হয়েছে।
যশোর থেকে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেই একটি চালান চলে গেছে মালয়েশিয়ায়। আরো কয়েকটি দেশে যাবে পর্যায়ক্রমে। ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি বাধাকপি সাড়ে ১১ টাকায় কৃষকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে। যশোরে যখন বাঁধা কপির দাম কমে যাচ্ছে সে সময় রপ্তানি শুরু হওয়ায় কৃষক আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন।
[…] […]