আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। কোনো বন্ধু আমাদের ক্ষমতায় বসাবে না, ক্ষমতায় বসাবে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, জনগণের ফরমায়েশে চলব।’
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় এক ছাত্রী সমাবেশে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
করোনা পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল অনেক দেরিতে ভারত সফরে গেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে নিয়ম অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ভারতে গেছে। এতে বিএনপির ঘুম নেই হয়ে গেছে। তাদের চিন্তা, আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি পাঠিয়ে ভারতে আবার কোনটা করছে? ভারত আমাদের বন্ধু। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে নিয়ম অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ভারতে গেছে। ওরা এসেছে, আমরাও যাব। কয়েক দিন আগে চীনেও আমাদের প্রতিনিধিদল গিয়েছে।’
প্রয়োজনে সংশোধন হবে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে। এই সরকার জনগণের সরকার, বিবেকের সরকার। আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক কি বেঠিক, তা জনগণের কাছে শুনব। সেখানে কোনো সংশোধন প্রয়োজন হলে সেটা আমরা করে নেব। এ নিয়ে আবার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য শুরু হয়েছে। সাইবার চার্জ যাঁদের বিরুদ্ধে আছে, তাঁদের বিচার কি বাংলাদেশে হবে না? ঢালাওভাবে এই আইনের অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, সেটা দেখা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনার প্রশংসা করেই কি দায়িত্ব শেষ
‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের জনসংখ্যা চার লাখের বেশি। এই জনসংখ্যার মধ্যে আবার ১১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে, এখন বাড়তে বাড়তে ১২-১৩ লাখ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ কীভাবে এই লোকগুলোকে খাওয়াবে? অন্যদিকে ক্ষতি আমাদের ইকোলজির, আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের। কক্সবাজার শেষ, ধ্বংসের মুখে। এখন সাহায্য কমে গেছে। এখন আমাদের ওপরই এদের ভরণ-পোষণ নির্ভর করছে।
অন্যরা অনেককে আশ্রয় ও খাবার দিচ্ছে। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের কী অপরাধ? জাতিসংঘ ও উন্নত দেশগুলো কি শুধু শেখ হাসিনার প্রশংসা করেই দায়িত্ব শেষ করবে? আজ বিশ্ববিবেকের কাছে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।’
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা
এ সময় বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিশ্বরাজনীতিতে যারা আজ মোড়ল-মাতব্বর, যারা গণতন্ত্র-মানবাধিকারের মাতব্বর, তাদের নিজেদের দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কেমন আছে? যাদের দেশে গান ফায়ার হয়, শত শত নারী-শিশু মৃত্যুবরণ করে, সেখানে মানবাধিকারের পতাকাটা ভূলুণ্ঠিত কেন? যারা আমাকে ছবক ও পরামর্শ দেয়, তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা থামাতে পারে না কেন? দুষ্টু ছেলে ইসরায়েলকে তো কেউ কিছু বলে না! ফিলিস্তিনে রোজ রোজ রক্ত ঝরছে।…কাছের লোক, কাছের দেশ, আজ্ঞাবহ দেশের কোনো অপরাধ স্বীকার করা হয় না।…আজ আমেরিকান কিছু সিনেটর কারও লবিংয়ে পড়ে বাংলাদেশের নির্বাচন তত্ত্বাবধান করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আবেদন করেছেন। এ ধরনের ছবি আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। এ বছর পৃথিবীর মোট ২২টি দেশে নির্বাচন হলো।
বাংলাদেশ কী এমন অপরাধী দেশ যে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন—সবাই ঘুরে ঘুরে শুধু এখানে আসে? নাইজার, সোমালিয়া, কঙ্গো—এসব দেশে কী হচ্ছে, সেই খবরই নেই।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় ছাত্রী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি তামান্না জেসমিন, খাদিজা আক্তার, কোহিনূর আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসাইন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা সম্পাদক সাফিনাজ হাসান তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা বঙ্গমাতার জীবনের নানা দিক তুলে ধরে তাঁর আদর্শে সবাইকে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :