দালালের দখলে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রীতিমতো দালালদের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কমিশনের আশায় এসব দালালদের লালন পালন করছেন খোদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একশ্রেণির ডাক্তার ও তার আশে পাশের লোকজন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো বেশ কিছু ডায়গনস্টিক সেন্টার ও কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল। এসব প্রতিষ্ঠানের রোগীর যোগান দেওয়ার জন্যই বেপরোয়া দালাল চক্র। এদের মধ্য এবি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অন্যতম, যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্য মতে এবি ডায়াগনস্টির সেন্টার পরিচালনা করার বৈধ কাগজপত্র নেই। অথচ প্রতিষ্ঠানটি দিনের পর দিন প্রশাসনের চোঁখের সামনে এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে কি করে সেই প্রশ্ন বৈধ ডায়গনস্টিক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের। নাম প্রকাশ নানা করার স্বার্থে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান এবি ডায়গনস্টিক সেন্টারের নেই দক্ষ টেকনিশিয়ান পরিক্ষার যে রিপোর্ট দেওয়া হয় তা রিতিমত রোগীর সাথে প্রতারনার সামিল।
ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে গত ২৫ এপ্রিল অভয়নগয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এবি ডায়গরস্টিক সেন্টারের একাধিক দালাল হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, বহির বিভাগের সামনে ঘোরা ফেরা করছে, সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সটকে পড়লেও এবি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক রানা কে জরুরী বিভাগের সামনে কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে ঘুরতে দেখা যায়। সাংবাদিক ছবি তুলছে এমন খবর কানে যেতেই সে দ্রæত হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায়।
জরুরী বিভাগের সামনে ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষায় থাকা প্রেমবাগের সুরমা জানান, সে (রানা) তাকে সহ সেখানে থাকা রোগীদের কাছে কে কি সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাবো তা জানতে চাইছেন। আমি ভেবেছিলাম তিনি হাসপাতালের লোক। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম তিনি এবি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোক। সেই লোকটি (রানা) আমাকে বলেন ডাক্তার পরীক্ষা দিলে তার এই প্রতিষ্ঠান থেকে করালে কম সময়ে ভালো রিপোর্ট পাওয়া যায়। তুলনা মূলক অন্যদের থেকে টাকা কিছু কম করাতে পারবে বলেও সে বলেছে।
এদিন হসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি, প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের দালালরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নিতে দেখা যায়। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে মোবাইলে রোগীর ব্যাবস্থা পত্রের ছবি তুলতে দেখা যায়। আর দালাল যে ডাক্তারের সাথে সম্পৃক্ত তার প্রমান পাওয়া যায়। দেখা যায়, ডাক্তারের কাছে কৌশলে নিয়ে যাওয়া এবং ইচ্ছেমতো অপ্রয়োজনীয় টেস্ট লিখে নেওয়ার কৌশল করছে দালাল। রোগীকে কমপ্লেক্স থেকে বের করে নিয়ে দালালের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য করার ঘটনা হরহামেশায় প্রতিদিন ঘটছে।
আরও পড়ুন: সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ; রাজারহাট শ্মশান লুটপাটের অপচেষ্টা
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে প্রসুতি সেবা নিতে আসা নারীদের কৌশলে নরমাল ডেলিভারির কথা বলে অন্য স্থানে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য করছে কিছু মহিলা দালাল। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ওহিদুজ্জান খান দালালদের সম্পুর্ন নির্মুলে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এর আগেও বিভিন্ন সময় দালালদের বিতাড়িত করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রোগীদের জন্য দেওয়া অতিরিক্ত পরীক্ষা, অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম বিষয়ে যশোর সিভিল সার্জন ডা: বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন চিত্র জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম, খুব দ্রুত আমি পদক্ষেপ নেবো। অচিরেই অভয়নগর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নাগরিক বন্দনার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
[…] […]