ঢাকার সেরা ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব-২০২২ এ চূড়ান্ত পর্বে। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, এরপর খণ্ডন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ কাউকে ছাড় নয়- এমন জমজমাট লড়াইয়ে ‘বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ)-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব-২০২২’-এর চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা বিভাগ-২ থেকে আটটি দল।
বুধবার রাজধানীর পান্থপথে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে এ বিতর্ক উৎসব হয়। ‘বিতর্ক মানেই যুক্তি, বিজ্ঞানে মুক্তি’ প্রতিপাদ্যে উৎসবে অংশ নেয় ঢাকা বিভাগ-২-এর আওতাধীন ঢাকা মহানগর, রাজবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বিতর্ক উৎসব উদ্বোধন করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএফএফের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ফয়েজ হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমকাল সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় প্রধান আসাদুজ্জামান।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে সহশিক্ষা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রসংসদের একসময়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ। বিতর্ক উৎসবের মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকশিত হবে। আমরা যা পারিনি, তা করে দেখাবে তারা। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নানা কারণে দেশে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
অধ্যাপক মো. ফয়েজ হোসেন বলেন, ‘সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে তরুণসমাজকে উদ্দীপ্ত করবে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। যুক্তি-চর্চার মাধ্যমে বিতার্কিকরা অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহিষ্ণু মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা যুক্তির মাধ্যমে নিজের কথা অন্যের কাছে তুলে ধরা শিখছে।’
সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কুসংস্কারের অন্ধকার ছেড়ে দেশকে আলোর পথে নিতে নেতৃত্ব দেবে আজকের শিক্ষার্থীরা। এ জন্য তাদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। বিএফএফ-সমকাল বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবের মধ্য দিয়ে তৃণমূল থেকে শহরে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটবে। আগামীতেও এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
দেশে স্কুল পর্যায়ে সবচেয়ে বড় এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তুখোড় মেধাবীরা দিনভর তাদের তীক্ষষ্ট বুদ্ধির যুক্তি তুলে ধরে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারেই মিলবে মুক্তি’- এটি প্রমাণের চেষ্টা করে। আজ ‘পরীক্ষাগারের অপ্রতুলতার কারণেই বিজ্ঞানশিক্ষা ফলপ্রসূ হচ্ছে না’- এ বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্কে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে হার মানে শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। একই বিষয়ে উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে হারায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
আরও পড়ুনঃ যুব মহিলা লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
‘পরিবেশ দূষণ রোধে শুধু নীতিমালা নয়, সামাজিক সচেতনতা জরুরি’- এ বিষয়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল হারায় মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে। একই বিষয়ে সাভারের সেনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ জয় পায় সেন্ট যোসেফ হাইস্কুলের বিপক্ষে। ‘প্রযুক্তি নির্ভরতা আমাদের মানবিক মূল্যবোধ হ্রাস করছে’- এ বিষয়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের তার্কিকরা পাল্টা যুক্তিতে মাত করে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিতার্কিকদের। একই বিষয়ে যুক্তির লড়াইয়ে ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল জয় তুলে নেয় রাজবাড়ী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপক্ষে। ‘ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের বিপথগামী করছে’- এ বিষয়ের বিতর্কে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলকে হারায় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ। একই বিষয়ে সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজকে হারিয়ে বিজয়ী হয় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।
পরে বিজয়ীদের মাঝে সনদপত্র তুলে দেন বিচারকরা। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগের আরও আটটি দল বিতর্কে বসছে। এবার বিতর্কের বিভাগীয় পর্যায় থেকে উত্তীর্ণদের নিয়ে আগামী ৩০-৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত আসর হবে।
আপনার মতামত লিখুন :