চোর ছেড়ে দিয়ে এতিম ভ্যনচালককে চালান। কোম্পানির টাকা চুরি চোর আটক, টাকা উদ্ধারের পর ম্যানেজার ও তদন্তকারী কর্মকর্তা একই কোম্পানির ভ্যানচালককে সেই মামলায় ফাঁসিয়ে দিলেন। এই ষড়যন্ত্রে এতিম ভ্যান চালক সাব্বির হোসেন বর্তমানে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীন রয়েছেন। আসামীর দরিদ্র স্বজনরা এই অভিযোগ করেছেন। ভ্যানচালক সাব্বির হোসেন মনিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুরের মৃত আবুল কালামের পুত্র। সে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটার মেসার্স আজিজুর রহমানের শাখা অফিস ঝিকরগাছা কৃষ্ণনগরের অধীনে ভ্যানচালক। এর প্রধান অফিসটি যশোর শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে ৬ নং বাড়িতে অফিসটি অবস্থিত।
জানা গেছে, শুক্রবার বন্ধের দিন তাই ভ্যানচালক সাব্বির বাড়ি ছিল। কৃষ্ণনগরের আরিফুণ ইসলামের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় শাখা অফিসের ম্যানেজার তাকে ফোন দিয়ে অফিসে আসতে বলে। সে অফিসে আসে।
সেখানে ঝিকরগাছা থানার একজন দারোগা উপস্থিত ছিলেন। ম্যানেজার তাকে ছবি তুলতে বললে সে তার স্কিনটাচ মোবাইল ফোন যা ৭/৮ দিন আগে ক্রয়কৃত সেটি ব্যবহার করে ছবি তুলতে উদ্যত হয়।
এসময় দারোগা তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। অথচ ততক্ষনে ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বাদি হয়ে টাকা চুরির একটি মামলা করেছে। যেখানে আসামি চার জন আটক হয়েছে ও টাকা উদ্ধার হয়েছে।
সারারাত দারোগা সাব্বিরকে এই ছাড়ি তখন ছাড়ি বলে আটকে রেখে বলে সকালে অজ্ঞাতনামা আসামি করে চালান দেয়। মামলা নম্বর ১২, তারিখ : ১৬/১০/২০২২।
ঝিকরগাছা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ ওহিদুজ্জামান তাকে ঐ মামলায় চালান দিয়ে তার রিমান্ড দাবি করে। এজাহারে তাকে এ এস আর দাবি করলেও বাস্তবে সাব্বির হোসেন শাখা অফিসের ভ্যানচালক। তার কাছে কোন টাকা থাকেনা। এস আর দের সাথে থেকে সে অফিসের দিন মালামাল সরবরাহ করে মাত্র।
ভ্যান চালক সাব্বিরের মা সাহিদা জানান, সাব্বিরের বয়স যখন দুই বছর তখন তার পিতা মারা যায়। সে নানা নানীর কাছে লালন পালন হয়। সাহিদার অন্যত্র বিয়ে হলেও নানা নানী তাকে বড় করে। অবহেলায় তার
লেখাপড়া হয়নি। আস্তে আস্তে সে ভ্যান চালাতে শিখে গত ৬/৭ মাস কোম্পানীর ভ্যানচালক পোষ্টে চাকুরি করে। এর আগে সে সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হলে রাজধানী ঢাকার সরকারি পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। তার পায়ে রড ঢুকিয়ে অস্ত্রোপাচার করা হয়। এ কারনে তার পা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। সংসার চালাতে তাকে অসুস্থ হয়েও ভ্যান চালাতে হয় বাধ্য হয়ে।
আরও পড়ুন: অভয়নগরে অটো রাইস মিলের বয়লার বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় সারারাত ঝিকরগাছা থানায় কান্নাকাটি করলেও দারোগার মন নরম হয়নি। তাকে সকালে ছেড়ে দেবো বলে ১৭ অক্টোবর টাকা চুরি মামলায় চালান দিয়েছে। তবে তার মোবাইল
সেটটি দারোগা রেখে দিয়েছে। আদতে সাব্বিরের কোন ব্যাংক একাউন্টও নেই। এমনকি তাকে চালানের আগেরদিন ১৬ অক্টোবর ঐ মামলার এজাহার নামীয় চারজন আসামি যশোর কোতকয়ালি থানার আমদাবাদের আব্দুল খালেকের পুত্র ফয়সাল মিয়া, ঝিনাইদহ জেলার কালিগজ্ঞ থানার কালুখালির আব্দুল গফুরের পুত্র সাইদুর রহমান, মনিরামপুরের রমজান আলীর পুত্র সোবহান ও ইউনুচ আলীর পুত্র জুবায়ের হোসেনকে আটক করে চালান দেয় ঝিকরগাছা থানা পুলিশ। এতিম বলে মা ছাড়া আর কেউ ভ্যানচালক সাব্বিরের খোজও নেয়নি। অথচ নির্দোষ জানা সর্ত্তেও সাব্বিরের রিমান্ডও চেয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা।
[…] চোর ছেড়ে দিয়ে এতিম ভ্যনচালককে চালান […]