কেঁচো সারে ভাগ্যবদল মোহাম্মদ আলীর। পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনে সফল যশোরের শার্শা উপজেলার ছোট নিজামপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী। কৃষি খাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ কেঁচো সার উৎপাদনে মাত্র তিন বছরে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন এই উদ্যোক্তা।
বর্তমানে মোহাম্মদ আলীর উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ থেকে ৩ টনের বেশি কেঁচো সার বাজারজাত করা হয়। বিশেষ প্রজাতির কেঁচো ব্যবহার করে উদ্ভিদ বা প্রাণীর বর্জ্য ও দেহাবশেষকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর যে সার পাওয়া যায় সেটাই মূলত
কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট নামে পরিচিত। কৃষকদের কাছে এটি পরিবেশবান্ধব সার নামেও পরিচিত। যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় কেঁচো সার ব্যবহারে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন প্রান্তিক কৃষকরা। আবার অনেকেই সামান্য পুঁজি নিয়ে বাড়িতেই বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সরেজমিনে মোহাম্মদ আলীর ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্টে দেখা যায়, বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গাজুড়ে প্রায় ৫০টি রিং, ২০টি বড় বড় পাত্র ও সিমেন্টের তৈরি ১০০ ফুট লম্বা হাউস নিয়ে তৈরি করেছেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র। প্রথমে গোবর সংরক্ষণ করে টিনের চালায় রাখা হয়েছে। তারপর সেই গোবর হালকা শুকিয়ে রিং বা হাউসে দিয়ে কয়েক দিন রাখার পরই তাতে কেঁচো দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ দিনেই উৎপাদন হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এরপর সেটি বাজারজাত করতে বাছাই করে প্যাকেটজাত করা হয়।
ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের সফল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলী জানান, নিজের জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারের জন্য ২০১৯ সালে করোনার মধ্যে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডলের পরামর্শে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১৬টি রিং ও প্রয়োজনীয় কেঁচোসহ সকল উপকরণ নিয়ে এই প্রোজেক্ট শুরু করেন। এরপর অসিত কুমার মন্ডলের দিকনির্দেশনা ও নিজের পরিশ্রমের ফলে মাত্র তিন বছরে ব্যাপক সফলতা পান এ উদ্যোক্তা। বর্তমানে মোহাম্মদ আলীর এ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ থেকে ৩ টনের বেশি ভার্মি কম্পোস্ট সার বাজারজাত করা হয়। তাছাড়া বাজারে ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে পরিবেশবান্ধব এ সারের।
মোহাম্মদ আলী আরও জানান, শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ, অর্ধপচা গোবর একসঙ্গে মিশিয়ে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো সেসব ময়লা খেয়ে মলত্যাগ করে পচিয়ে ফেলে ও বংশবিস্তার করতে থাকে। কেঁচোর পচিয়ে ফেলা দ্রব্যই মূলত জৈব সারে পরিণত হয়। প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে এই জৈব সার উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেঁচো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দরে।
এই বিষয়ে শার্শা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল বলেন, সবজি চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারে প্রাধান্য দিয়ে যদি সবজি উৎপাদন করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন সবজিগুলো বিষমুক্ত ও নিরাপদ থাকে, অপরদিকে মাটির গুণাবলিও অনেক বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া মোহাম্মদ আলীর ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে শুরু থেকে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এই ধরনের উদ্যোক্তা তৈরিতে আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ন: ঝিকরগাছায় সৌদি আজওয়া খেজুর চাষ
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ অর্থাৎ এ কেঁচো সারের বিশেষত্ব হলো এটি হিউমাস সমৃদ্ধ জৈব সার। এটি মাটির উর্বরতা ও গাছের বৃদ্ধিসহ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাটির লবণাক্ততা কমায়। এছাড়া এই সার মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি রাসায়নিক বিষমুক্ত। এ জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়।
পরিবেশবান্ধব এ জৈব সার উৎপাদনে আরও উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে দেশের কৃষি খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারবে কৃষকরা। দেশের কৃষি উৎপাদনের স্বার্থে এ সারের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :